ক্যাসিনো সম্রাটকে গ্রেফতারে গ্রিন সিগন্যালের অপেক্ষা

হাওর বার্তাঃআলোচিত যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট ঢাকার জুয়াড়িদের কাছে ‘ক্যাসিনো সম্রাট’ হিসেবে পরিচিত। জুয়া খেলাই তার পেশা ও নেশা। প্রতিমাসে ঢাকার বাইরেও যান জুয়া খেলতে। বিশেষ করে টাকার বস্তা নিয়ে সিঙ্গাপুরে যান তিনি। সেখানে জুয়ার পাশাপাশি নারীসঙ্গও উপভোগ করেন।

সম্প্রতি রাজধানীতে ক্লাব ব্যবসার আড়ালে অবৈধ ক্যাসিনো পরিচালনার অভিযোগে র্যা বের হাতে ধরা পড়েন সম্রাটের ডান হাত হিসেবে পরিচিত যুবলীগ ঢাকা মহানগর দক্ষিণের সাংগঠনিক সম্পাদক খালেদ মাহমুদ ভূঁইয়া। এরপর ধরা পড়েন রাজধানীর টেন্ডার কিং আরেক যুবলীগ নেতা জিকে শামীম। এ দুজনই অবৈধ আয়ের ভাগ দিতেন সম্রাটকে। তারা গ্রেফতার হওয়ার পর জিজ্ঞাসাবাদে সম্রাটের অবৈধ ক্যাসিনো সাম্রাজ্য নিয়ে চাঞ্চল্যকর তথ্য দেন। প্রকাশ্যে চলে আসে সুন্দর অবয়বের আড়ালে সম্রাটের কুৎসিত জগত। এতে করে বেকায়দায় পড়েন সম্রাট।

এর পর গা ঢাকা দেন যুবলীগ নেতা ইসমাইল হোসেন চৌধুরী সম্রাট। আড়ালে থেকেই গ্রেফতার থেকে বাঁচতে নানা তৎপরতা শুরু করেন। ফন্দিফিকির শুরু করেন কীভাবে নিজেকে বাঁচানো যায়। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী তাকে গ্রেফতারের ক্ষেত্রে সরকারের উচ্চ মহলের গ্রীন সিগন্যালের অপেক্ষায় রয়েছে বলে জানা গেছে।

ক্যাসিনো সম্রাটের অবস্থান নিয়ে মানুষের মাঝে দেখা দিয়েছে নানা প্রশ্ন। খালেদের পর সম্রাটের গ্রেফতারের গুঞ্জন ছিল। কিন্তু এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় একেকজন একেক ধরনের কথা বলছেন।

সম্রাটের ঘনিষ্ট সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি পরিচালিত জুয়া-ক্যাসিনোবিরোধী পুলিশ ও র্যাবের অভিযানের শুরুতে সম্রাট আত্মবিশ্বাসী ছিলেন।

এ সময় বেশ কয়েকজনকে গ্রেফতার করা হলেও তাকে কেউ স্পর্শ করবে না- এমন বিশ্বাস ছিল। উল্টো আইনশৃঙ্খলা বাহিনীকে মনস্তাত্ত্বিকভাবে চাপে রাখতে অভিযানের শুরুর দিকে তিনি দলের নেতাকর্মীদের নিয়ে কাকরাইলে মহানগর যুবলীগ দক্ষিণের কার্যালয়ে অবস্থান নেন।

কিন্তু অভিযানের গতি ক্রমেই বাড়তে থাকায় তিনি ঘাবড়ে যান। দেশত্যাগে নিষেধাজ্ঞা এবং ব্যাংক হিসাব জব্দ করার পর সম্রাট গ্রেফতার আতঙ্কে ভুগতে শুরু করেন।

যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, খালেদ ও জি কে শামীম গ্রেফতারের পর নড়ে বসেন সম্রাট। গ্রেফতার এড়াতে নানা মহলে লবিং শুরু করেন। যুবলীগ কেন্দ্রীয় নেতৃত্বকে বোঝাতে চান যে, তাকে ছাড়া ঢাকায় যুবলীগের কর্মসূচি বাস্তবায়ন করার মতো কেউ নেই। এভাবে তিনি কেন্দ্রীয় নেতাদের ম্যানেজ করার চেষ্টা করেন। লোকচক্ষুর অন্তরালে থেকেই এসব করেন সম্রাট।

সম্রাটের অবস্থান নিয়ে কেউ বলছেন, গ্রেফতার আতঙ্কে নেতাকর্মীবেষ্টিত হয়ে কাকরাইলে ভূঁইয়া ম্যানশনে তার ব্যক্তিগত কার্যালয়ে টানা ছয় দিন অবস্থান করেন। সেখানে শতাধিক যুবক তাকে পাহারা দেন। সেখানে সবার খাওয়াদাওয়ার ব্যবস্থা ছিল।

ওই সূত্রটির দাবি, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে সম্রাট বাসায় না থেকে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করেন। পরে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে গা ঢাকা দেন সম্রাট।

কেউ বলছেন বর্তমানে নিরাপদ কোনো স্থানে আত্মগোপনে আছেন ক্যাসিনো সম্রাট। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। পাশাপাশি তার সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

একটি দাবি, যুবলীগের শীর্ষ নেতাদের পরামর্শে সম্রাট বাসায় না থেকে ব্যক্তিগত কার্যালয়ে অবস্থান করেন। পরে মাদকের বিরুদ্ধে সরকারের কঠোর মনোভাব বুঝতে পেরে গা ঢাকা দেন সম্রাট।

কেউ বলছেন বর্তমানে নিরাপদ কোনো স্থানে আত্মগোপনে আছেন ক্যাসিনো সম্রাট। তার অবস্থান সম্পর্কে নিশ্চিত হতে বাড়ানো হয়েছে গোয়েন্দা তৎপরতা। পাশাপাশি তার সম্পর্কে আরও তথ্য সংগ্রহ করা হচ্ছে।

আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর এক পদস্থ কর্মকর্তা জানিয়েছেন, সম্রাট পুলিশের নজরদারিতে রয়েছেন। তিনি ঢাকাতেই আছেন। সম্রাটের বিরুদ্ধে আদৌ কোনো ব্যবস্থা নেয়া হবে কিনা- জানতে চাইলে ওই কর্মকর্তা বলেন, সবাই সবুজ সংকেতের অপেক্ষায় আছেন।

যুবলীগের শীর্ষস্থানীয় এক নেতা জানান, সম্রাট কিছুটা চাপে আছেন। তাকে শেষ পর্যন্ত গ্রেফতার করা হবে কিনা, বিষয়টি এখনও তিনি নিশ্চিত নন। তবে তাকে গ্রেফতারের ব্যাপারে চাপ বাড়ছে। এ কারণে নিজেকে আড়ালে রেখেছেন তিনি।

মাদকবিরোধী সরকারের কঠোর মনোভাবে অবস্থা বেগতিক দেখে তিনি আত্মগোপনে যাওয়ার পরিকল্পনা করেন। শুরুতেই ঘন ঘন অবস্থানও পরিবর্তন করেন। যুবলীগের কার্যালয় থেকে ‘ছদ্মবেশ’ নিয়ে বেরিয়ে আসেন।

এরপর দুটি ঠিকানা বদলের পর তিনি নির্ভরযোগ্য স্থানে চলে আসেন। বর্তমানে তিনি এখানেই পালিয়ে আছেন। কারও কারও মতে, সম্রাট কাকরাইলের অফিস থেকে বের হয়ে ঢাকার বাইরে চলে গেছেন।

সীমান্তবর্তী কোনো এক জেলা থেকে তিনি দেশ ছাড়বেন। তবে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সূত্রগুলোর দাবি, সম্রাট দেশেই আছেন। ঢাকায়ই অবস্থান করছেন। তাদের নজরদারিতেই আছেন তিনি।

নির্ভরযোগ্য একটি সূত্র জানায়, প্রভাবশালী বন্ধুরা কেউ তার ফোন না ধরায় সম্রাট বেকায়দায় পড়েছেন। অভিযান শুরুর পর থেকে দু-একজন ছাড়া অধিকাংশ প্রভাবশালী তাকে এড়িয়ে চলা শুরু করেন। তার ফোনও ধরেন না।

কাজেই এ পরিস্থিতিতে কারও সঙ্গে পরামর্শ করার সুযোগও পাচ্ছিলেন না। এরপরও তিনি অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে বর্তমান আস্তানায় চলে আসেন। সেখানে পৌঁছার পর ওই নেতা খুশি না হলেও তাকে সাময়িক আশ্রয় দিয়েছেন বলে জানায় সম্রাটের ঘনিষ্ঠ একটি সূত্র।

অপর একটি সূত্র জানায়, সম্রাট গ্রেফতার হলে অনেক প্রভাবশালীর নাম প্রকাশ হয়ে যাবে- এমন শঙ্কায় আছেন কিছু নেতা। তাদের কেউ কেউ আগে থেকেই সম্রাটকে পরামর্শ দিচ্ছেন, গ্রেফতার এড়িয়ে চলতে।

তাদের পরামর্শে তিনি নিরাপদ স্থানে আত্মগোপন করেছেন। এ ধরনের নেতার পরামর্শে ও সহযোগিতায় তিনি সুযোগ-সময়মতো এক ফাঁকে দেশ ছাড়তে পারেন- এমন আশঙ্কাও আছে বলে মনে করেন সংশ্লিষ্টরা।

ক্যাসিনোর বিরুদ্ধে সাঁড়াশি অভিযানে সম্রাট এখনও গ্রেফতার না হওয়ায় নানা ধরনের প্রশ্নের সৃষ্টি হয়েছে। সম্রাটকে আদৌ গ্রেফতার করা হবে কি না, তা নিয়েও কথার ডালপালা ছড়াচ্ছে।

তবে সোমবার সচিবালয়ে বিষয়টি স্পষ্ট করেছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী আসাদুজ্জামান খান কামাল। তিনি সাংবাদিকদের বলেন, গডফাদার-গ্র্যান্ডফাদার বলতে কিছু নেই। আমরা চিনি অপরাধীকে। অপরাধী যে বা যারাই হোক, তাদের আইনের আওতায় আনা হবে।

Print Friendly, PDF & Email

     এ ক্যাটাগরীর আরো খবর